Full width home advertisement

বাংলাদেশ

বিদেশ

ধর্ম

স্বাস্থ্য

কৃষি ও অর্থনীতি

Post Page Advertisement [Top]

 

বিটিবি নিউজ ডেস্ক: বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এখন বিপর্যস্ত ১২ জেলা। জেলাগুলো হলো- ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। এর মধ্যে ফেনীর, অবস্থা ভয়াবহ।

এ ছাড়া কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারেও বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং ভারত থেকে আসা পানিতে ডুবে গেছে মানুষের ঘর-বাড়ি। ভেসে গেছে গবাদিপশু, ঘের ও পুকুরের মাছ। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, সবজি ক্ষেত। সড়ক ও রেলপথ ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎহীন রয়েছে ফেনীসহ কয়েকটি জেলা। মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। বন্যাকবলিত ১২ জেলায় ১৮০০ মোবাইল টাওয়ার অচল। যোগাযোগ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল এ তথ্য জানান। দুর্গত এলাকায় এখনো প্রায় ৯ লাখ পরিবার এখনো পানিবন্দি। দুর্গত এলাকার মানুষ এখনো আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে না। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে মেডিকেল টিম। উদ্ধার অভিযানে নেমেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও চলছে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা এবং উদ্ধার কাজ। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেকে নৌকা ও শুকনো খাবার নিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন। পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় বন্যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এসব উপজেলার অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানির নিচে। এ ছাড়াও ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতেও অসংখ্য মানুষ পানিবন্দি। জেলা শহরের মূল সড়কে গলা পানি। অন্য উপজেলাগুলোতেও লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি। জেলা প্রশাসন দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা ও শুকনো খাবার পৌঁছে দিতে কাজ করছে। ভারী বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ভয়াবহ এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত ২০ আগস্ট রাতে ভারতের ত্রিপুরার ডিম্বুর হাইড্রোইলেক্ট্রিক বাঁধ খুলে দেয়ায় হঠাৎ মানবিক বিপর্যয় নেমে আসে। ফেনীর মানুষ এর আগে কখনো এরকম ভয়াবহ বন্যা দেখেনি। এদিকে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। নাজিরহাট পুরাতন ব্রিজ এলাকায় গতকাল হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে হাটহাজারীর নাজিরহাট, মন্দাকিনী ফরহাদাবাদ এবং সুয়াবিল এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

বন্যার পানিতে ডুবে, পাহাড় ধসে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বিভিন্ন জেলায় ১৩ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৪জন, কক্সবাজারে ৩জন, চট্টগ্রামে ২জন, ফেনীতে একজন, নোয়াখালীতে একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানায় বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। আর ৮ লাখ ৮৭ হাজার ৬২৯টি পরিবার পানিবন্দি। তবে ওইসব জেলায় যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ করছেন তাদের মতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫০ লাখেরও অধিক হবে।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাদেরকে দুর্গত এলাকায় যেতে বলেছেন। এ ছাড়া দেশবাসীকেও বন্যার্তদের সাহায়্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। বন্যার্তদের সাহায্যে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে অনুদান পাঠানোরও আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে আজ থেকে আবারও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে ,আগামী ২৬শে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশেই বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বন্যাকবলিত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও কক্সবাজারে শনিবার (আজ) থেকে আবারও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। শুক্রবার সকালে দেয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, মৌসুমি বায়ু ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর প্রভাবেই সারা দেশে বৃষ্টির প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস বলছে, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলসহ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, বরিশাল ও সিলেটের অধিকাংশ জায়গায় দমকা হাওয়া সহ ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বন্যার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

ফেনী থেকে মো. ওমর ফারুক জানান, এ জেলার ৬ উপজেলায় এখনো লাখো মানুষ পানিবন্দি। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দরা। তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির। গতকাল শুক্রবার সকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলো হলো- ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম ও দাগনভূঞা। পানিবন্দি বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে নিতে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম এ তিন উপজেলা পুরোটাই বন্যাকবলিত। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। অন্যদিকে ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সোনাগাজী উপজেলার সব ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকেছে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ দুর্ভোগে আছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রায় এক লাখ মানুষ এখনো পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। বন্যাকবলিত প্রায় সব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। বেশির ভাগ মোবাইল টাওয়ার অকেজো হয়ে পড়েছে। এতে জেলার বাইরে থেকে তাদের আত্মীয় ও পরিবারের লোকজন বন্যাকবলিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। জেলাটির ৯০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে অচল হয়ে পড়ায় টেলিযোগাযোগ সেবা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন সেখানকার মানুষ। এতে উদ্ধার কাজ ও ত্রাণ তৎপরতা চালাতেও হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। এদিকে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভি-স্যাট ব্যবহারসহ বিকল্প উপায়ে প্রচেষ্টা চালানোর পরও মোবাইল টাওয়ারগুলো সচল করা সম্ভব হয়নি। ফেনী ছাড়াও কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার ব্যাপক সংখ্যক টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নোয়াখালীর ৩৩ শতাংশ এবং কুমিল্লার ২১ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার এখন অচল।

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন জানান, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বাঁধ খুলে দেওয়ায় আসা ঢলে শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা করা যায়নি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের মিথিলাপুর এলাকায় বুরবুড়িয়ার গোমতী প্রতিরক্ষা বাঁধ। এর ফলে লোকালয়ে হু হু করে পানি ঢুকে তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। বুড়িচং উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও পাশের ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামসহ অন্তত ৪০টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে আছে লাখো মানুষ। কুমিল্লা শহরের সঙ্গে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় যনবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গতকাল (২৪ আগস্ট) সকালে বুড়িচংয়ের বুরবুরিড়ায় ভেঙে পড়া বাঁধ এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, বাঁধের অন্তত দেড়শ’ থেকে দুইশ’ ফুট অংশ পুরো ধসে গেছে। এ অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানির স্্েরাত ভাসিয়ে দিচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। পানির প্রবাহে পার্শ^বর্তী উপজেলা ব্রাহ্মণপাড়ার বেশ কয়েকটি গ্রামও প্লাবিত হয়েছে।

বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর আতঙ্কিত লোকজন বাঁধের ভাঙ্গন অংশ থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে সড়কের ওপর খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নেয়। অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিলেও বেশির ভাগ মানুষই সহায় সম্বল ফেলে কোনরকমে খোলা আকাশের নিচে এসে প্রাণ বাঁচিয়েছে। আবার ভোরবেলা থেকেই অনেক স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় নিচতলা পানিতে তলিয়ে থাকায় ভেতরে যেতে পারেননি বানভাসী মানুষজন। এদিকে গোমতীর বাঁধ ভাঙার খবর জানতে পেরে স্পিডবোট ও ত্রাণ সহায়তা নিয়ে অনেকে এসেছেন বুড়িচংয়ে। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধার করতে দেখা গেছে তাদের। নরসিংদীর রায়পুরা থেকে আসা ১০ জনের একটি টিমকে দেখা গেছে দুইটি স্পিড বোট নিয়ে পানিবন্দি নারী, পুরুষ, শিশুদের উদ্ধার করছেন। তারা একটি ট্রাকে করে বন্যাকবলিতদের জন্য খাদ্য সামগ্রীও এনেছেন। এছাড়াও সেনাবাহিনী সদস্যরা পানিবন্দি মানুষজনদের উদ্ধার ও অন্যান্য সহযোগিতা মূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। সেনাবাহিনীর পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে, বুড়িচংয়ে প্রায় ১৫০ জন পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করেছেন সেনা সদস্যরা। সেনাবাহিনীর উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত আছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে খ আ ম রশিদুল ইসলাম জানান, জেলার আখাউড়ার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে শুক্রবার দুপুর নাগাদ দেড় থেকে দুই ফুট পানি কমে গেছে। এই অবস্থায় অনেক পরিবারই আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। আগামী দুই-একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আশা করা হচ্ছে। প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এদিকে পানি কমলেও স্রোতের তোড়ে আখাউড়া-কসবা সড়কের দেবগ্রাম ও নয়াদিল এলাকাকে ভাগ করা একটি ছোট্ট সেতুর একপাশ ধ্বসে যায়। এতে করে বৃহস্পতিবার রাত থেকে আখাউড়া উপজেলার সাথে কসবা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া পৌর এলাকার দেবগ্রামে নতুন নির্মাণ হওয়া আরেকটি সেতুর এপ্রোস সড়কের পাশ থেকে মাটি সরে গেছে। দ্রুত পানি না কমলে এটিও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। দু’টি সেতুর কাছে বৈদ্যুতিক খুটিট থাকায় ওই এলাকাসহ আশেপাশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দর এলাকার কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনে গিয়ে দেখা গেছে সেখানেও পানি একেবারেই কমে গেছে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, কম্পিউটারসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস ঠিকঠাক থাকলে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দু’একদিনের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

কক্সবাজার থেকে শাকিলুর রহমান শাকিল জানান, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ঈদগাঁওর ফুলেশ্বরী, বাঁকখালী, মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। নদীর দুই তীর উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে ঢলের পানি। এতে নদীর তীর ও বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে অগণিত পরিবার। এদিকে রামু উপজেলায় ঢলের পানিতে ভেসে এই পর্যন্ত শিশুসহ ৩ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন থেকে একটি ট্রেনও ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীরা।

ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) থেকে সৈয়দ জাহেদুল্লাহ কুরাইশী জানান, ফেনী আর হালদা নদীসহ অন্যান্য নদ-নদীর ভাঙ্গন, উপচে পড়া পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা এবং হাটহাজারীর উত্তরাঞ্চলীয় ৪টি ইউনিয়ন। এ পর্যন্ত মাদ্রাসা ছাত্রসহ ২ ব্যক্তি নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। সরেজমিনে জানা গেছে, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ মারাত্মক আকার ধারণ করছে। নাজিরহাট পুরাতন ব্রিজ এলাকায় হালদা নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে হাটহাজারীর নাজিরহাট, মন্দাকিনী ফরহাদাবাদ এবং সুয়াবিল এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। স্থানীয় মসজিদ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে সবাইকে সচেতন হওয়ার জন্য। সপ্তাহব্যাপী বর্ষণ, ভারতের ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি’র রামগড়, মহালছড়ি, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়িসহ পার্বত্যাঞ্চল থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ফটিকছড়ি’র উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ফেনী নদী, হালদা নদী, ধুরুং নদী ও সর্তাখালের ব্যাপক ভাঙ্গন এবং উপচে পড়া পানিতে ফটিকছড়ি উপজেলা ও হাটহাজারীর উত্তরাঞ্চল স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। বিশেষ করে ফেনী নদীতে ত্রিপুরা আর খাগড়াছড়ি থেকে নেমে আসা ঢলের পানি ভারত সীমান্তবর্তী ফটিকছড়ি’র ৫৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাগান বাজার ইউনিয়নের পাহাড়ী জনপদ পানি আধারে পরিণত হয়েছে। ৫০ বছরেও এমন বন্যা দেখেনি এলাকাবাসী। প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উপরে অবস্থান নিয়ে প্রাণরক্ষা করেছে। ফেনী নদীর পানি বিপদ সীমার ত্রি-গুণ অতিক্রম করেছে। ওখানে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধারে কাজও করা যাচ্ছে না। ফেনী-রামগড় মহাসড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) থেকে আসলাম পারভেজ জানান, হাটহাজারীতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তেমন বর্ষণ ছিল না। তাছাড়া শুক্রবার আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু হালদা নদী, অন্যান্য শাখা খাল ও ছড়ায় পাহাড়ী ঢলের প্রকোপ থাকায় উপজেলার আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল।

লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে আমানত উল্যাহ জানান, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থেকে লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। গত কয়েকদিনের অস্বাভাবিক জোয়ার এবং টানা বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট বন্যায় রামগতি-কমলনগরের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। টানা বৃষ্টি এবং পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে রামগতি উপজেলার উপজেলার চরগাজী, চররমিজ, চরআলগী, চরপোড়াগাছা এবং চরবাদাম ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে চরপোড়াগাছা ও চরবাদাম ইউনিয়ন পুরোটা ডুবে আছে পানিতে। কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ ও হাজিরহাট ইউনিয়নের প্রায় ১২ টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। যতদূর চোখ যায় কেবল পানি আর পানি। এসব গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বেড়িবাঁধের ঢালে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অনেকেই বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি উঠেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- এসব এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পানি উঠেছে। বন্যায় আমন বীজতলা, রোপা আমন ক্ষেত, পুকুর, ডোবা-নালা, পথঘাট, রাস্তাসহ সবকিছুই পানিতে তলিয়ে আছে।

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে নুরুল আবছার চৌধুরী জানান, টানা গত সাত দিনের প্রচ- বৃষ্টিতে রাঙ্গুনিয়ার সাতটি ইউনিয়নের প্রায় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৪০ হাজার পরিবারের দুই লক্ষাধিক লোকজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দেশের অন্যতম শষ্যভা-ার সাড়ে ছয় হাজার হেক্টরের গুমাইবিলের অধিকাংশ রোপা ধান অধিকাংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। দশ হাজারের বেশী মাছের ঘের বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন মৎস্য চাষিরা। সরেজমিন গেলে জানা যায়, উপজেলার উত্তরে ইছামতী সংলগ্ন স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, হোছনাবাদ, লালানগর, দক্ষিণ রাজানগর, রাজানগর, ইসলামপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও চন্দ্রঘোনা বনগ্রামের মূল সড়ক কোমর সমান পানিতে ডুবে গিয়ে হাজার হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে।-ইনকিলাব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Bottom Ad [Post Page]