বিটিবি নিউজ ডেস্ক: মসজিদের মিনারকে মুসলিম স্থাপত্য ও সংস্কৃতির বিশেষ অংশ মনে করা হয়। সে হিসেবে মসজিদের মিনারগুলো পৃথিবীজুড়ে বিস্ময়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ইসলামের আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে স্থাপত্যশিল্পের মেলবন্ধন ঘিরে তৈরি হয় এসব মিনার।
সৌন্দর্যের নিদর্শন হয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করে এগুলো। এ বিস্ময়কর নির্মাণকর্মগুলোর মধ্যে এক অন্যতম মসজিদের মিনার, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে, তা হলো- ‘দ্য গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স’-এর মিনার।
আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অবস্থিত গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স। বিশ্বের সর্বোচ্চ মসজিদের মিনার নিয়ে গর্বিত আলজেরিয়া। ২০২০ সালে নির্মিত এই মসজিদের মিনারের উচ্চতা প্রায় ২৬৫ মিটার বা ৮৭০ ফুট। এটি আফ্রিকার বৃহত্তম মসজিদ ও একইসঙ্গে উচ্চতায় সারা বিশ্বের সব মসজিদের মিনারকে ছাড়িয়ে গেছে। এর উচ্চতা এতটাই বেশি যে এর চূড়া থেকে সরাসরি ভূমধ্যসাগরের দৃশ্য দেখা যায়।
গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্সের মিনারটি আধুনিক প্রযুক্তি এবং ইসলামিক ঐতিহ্যের মিশ্রণে নির্মিত। এর নির্মাণশৈলী এবং স্থাপত্যে আধুনিক আরব স্থাপত্যের ছোঁয়া থাকলেও এতে ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক নকশার গভীরতা প্রতিফলিত হয়েছে। মিনারটি ৩৭তলা বিশিষ্ট এবং এর ওপরের তলায় একটি পর্যবেক্ষণ ডেক রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। সেই সঙ্গে এই মসজিদের মিনারে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার এবং একটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, যা এটিকে অন্যান্য মসজিদের মিনারের থেকে আলাদা করে তোলে।
গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি টাকায় তা ১২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার সমান। প্রকল্পটি চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (CSCEC) দ্বারা পরিচালিত হয়। ২০১২ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালে শেষ হয় এবং ২০২০ সালে মসজিদটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই বিশাল মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি বিশাল লাইব্রেরি, ইসলামিক আর্টস মিউজিয়াম, গবেষণাকেন্দ্র এবং সম্মেলন হলও রয়েছে।
গ্রেট মস্ক অব আলজিয়ার্স মসজিদটি এক সঙ্গে প্রায় ১ লাখা ২০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ধারণ ক্ষমতা হিসেবে এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। মসজিদ কমপ্লেক্সটি শুধুমাত্র ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, এটি একটি সামাজিক, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মুসলিম বিশ্বজুড়ে এটি ঐক্য ও সম্প্রীতির একটি প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এই বিশাল মিনার দেখতে আসেন। পর্যটকরা মিনারের পর্যবেক্ষণ ডেক থেকে আলজিয়ার্স শহর ও আশেপাশের দৃশ্য উপভোগ করে থাকেন। বিশেষ করে রাতে আলোকসজ্জিত এই মিনার পর্যটকদের মনে আলাদা দাগ কাটে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ মসজিদের মিনার হিসেবে আলজিয়ার্সের এই মিনারটি শুধু স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনই নয়, এটি মুসলিম ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এক অপূর্ব মিলন। আলজিয়ার্স মসজিদের এই মিনার বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য গর্বের প্রতীক।
২০২১ সালে নান্দনিক স্থাপনা হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ড খেতাব পায় মসজিদটি। ‘শিকাগো এথেনিয়াম মিউজিয়াম অব আর্কিটেকচার অ্যান্ড ডিজাইন এবং ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর আর্কিটেকচার ডিজাইন’ নামে দু’টি প্রতিষ্ঠান মসজিদটিকে ২০২১ সালের জন্য সবচেয়ে সুন্দর স্থাপনার স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ও মর্যাদাপূর্ণ স্থাপত্য পুরস্কার।-বার্তা২৪.কম
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন